ইউরিক অ্যাসিড বেড়েছে ? জয়েন্ট লাল হয়ে ফুলে আছে ? আর ব্যথার জন্যে উঠতে বসতে অসুবিধা হয় ? আজ আমরা জেনে নেব যে, কি খাব আর কি খাব না ।
মানবদেহের প্রধান রেচন অঙ্গ হল কিডনী । এই কিডনী এর মূল কাজ হল ছাকনির ন্যায় মানবশরীরের বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় রাসায়নিক পদার্থ যেমন ইউরিয়া, creatinine,ইউরিক অ্যাসিড ,অ্যামোনিয়া ইত্যাদি মূত্রের মাধ্যমে দেহের বাইরে বের করা ।এইসব পদার্থের মধ্যে ইউরিক অ্যাসিড একটি "পিউরিন" নামক রাসায়নিক পদার্থ ভেঙে তৈরি হয় । কিছুক্ষেত্রে বেশিমাত্রায় ইউরিক অ্যাসিড রক্তে সঞ্চিত হলে শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট এ স্ফটিক আকারে জমা হওয়ার ফলে তীব্র ব্যথার সৃষ্টি হয় এবং এই ব্যথাই "Gout " বা "গেটে বাত " নামে পরিচিত।
বর্তমানে অতিরিক্ত পিউরিন যুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে পুরুষ ও মহিলা উভয়ের মধ্যেই এই রোগ দেখা যায় । পুরুষ দের মধ্যে ইউরিক অ্যাসিড এর সাভাবিক মাত্রা 3.4-7.0 mg এবং মহিলা দের ক্ষেত্রে 2.4-6.0 mg হওয়া উচিত । এই মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার ফলে জয়েন্ট লাল হয়ে ফুলে যায় আর ব্যথার জন্যে উঠতে বসতে অসুবিধা হয় ।
সেইকারণে “Gout” বা “গেটে বাত” এর ব্যাথা প্রতিরোধ এবং কমানোর জন্যয়ে দৈনন্দিন জীবনে পিউরিন যুক্ত খাবারের আধিক্য কমান উচিত।
যেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে সেগুলি হল:
রেড মিট
অ্যালকোহল
সামুদ্রিক মাছ ও খাবার
চিনিযুক্ত খাবার
কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার, যেমন পাউরুটি, কেক, ইত্যাদি।
“Gout” জনিত ব্যাথা নিয়ন্ত্রণকারী কিছু খাবারে আমাদের নজর রাখা দরকার যেগুলো হল:
ভিটামিন সি রক্তের ইউরেট স্ফটিক কণা বের করতে পারে ,তাই ভিটামিন সি যুক্ত খাবার যেমন আমলকি , মুসাম্বী ,কমলা লেবু ,পেয়ারা ,পাকা পেপে ,কিউই , সবুজ শাকসবজি এবং আপেল ইত্যাদি খাবারে রাখা প্রয়োজন । এছাড়া আপেল এর ম্যালিক অ্যাসিড ইউরিক অ্যাসিড বের করতে সক্ষম ।
কিছু “Complex Carbs”যেগুলি কম গ্লাইসেমিক সূচক অর্থাৎ রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে সহায়তা করে যেমন গোটা খাদ্যশস্য (গম, ওটস, ব্রাউন রাইস , ভুট্টা, বার্লি, রাগি এবং বাজরা) এগুলি রোজকার খাবাররের তালিকায় রাখা প্রয়োজন ।
প্রোটীন জাত খাবারের মধ্যে কম ফ্যাট যুক্ত দুধ,ফ্যাটবিহীন প্রোটীন যেমন মটর, মটরশুটি, বাদাম ইত্যাদি খাওয়া জরুরী । এছাড়া ডিমে পিউরিন এর পরিমাণ কম হওয়ায় রক্তে ইউরিক অ্যাসিড এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে ।
বিভিন্ন ফল ও সবজি ফাইবারজাত খাবার হিসেবে রক্তে ইউরিক অ্যাসিড শোষণ করে কিডনির মাধ্যমে বের করতে সাহায্যকারী ভূমিকা পালন করে ,সে কারণে কিছু ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন নাশপাতি,শসা,গাজর, বাদাম এবং বীজ(আমন্ড ,আখরোট ,তিল ইত্যাদি) খাওয়া প্রয়োজন ।
ছাড়া গ্রীন টী বা ডিক্যাফিনেটেড কফি ইউরিক অ্যাসিড এর মাত্রা হ্রাসে সাহায্য করে ।
About Dr Debjyoti Dutta -
দেবজ্যোতি দত্ত একজন বিশিষ্ট পেইন স্পেশালিস্ট, যিনি বিভিন্ন ধরণের 'ইন্টারভেনশনাল পেইন ম্যানেজমেন্ট' পদ্ধতি প্রয়োগ করে ব্যথার রোগীদের চিকিৎসা করেন। তিনি ২০০৩ সালে কলকাতার মেডিকেল কলেজ থেকে অনার্স সহ এমবিবিএস পাশ করেন এবং তারপর লখনৌর কিং জর্জেস মেডিকেল ইউনিভার্সিটি থেকে এমডি করেন। তিনি ওয়ার্ল্ড ইনস্টিটিউট অফ পেইন, ইউএসএ থেকে ইন্টারভেনশনাল পেইন প্র্যাকটিসে ফেলোশিপ অর্জন করেন। তিনি বর্তমানে কলকাতার ফর্টিস হাসপাতাল এবং সমব্যথী পেইন ক্লিনিকে পেইন মেডিসিনের কনসালটেন্ট হিসাবে কাজ করছেন।ডঃ দেবজ্যোতি দত্ত পেইন ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে বিভিন্ন নিবন্ধ ও বই প্রকাশ করেছেন। তিনি বিভিন্ন পুরস্কার ও ফেলোশিপ পেয়েছেন তাদের পেইন মেডিসিনের কাজের জন্য।
Comments