কোমরে ব্যথা? MRI স্বাভাবিক, তবু ব্যথা হচ্ছে? জানুন ৬ টি লুকোনো কারণ
- Dr Debjyoti Dutta
- Apr 19
- 3 min read

MRI বা X-ray রিপোর্টে যদি সবকিছু স্বাভাবিক দেখায়, অথচ কোমরের ব্যথা থেকেই যায়, তবে বিষয়টি অবহেলা করার মতো নয়। কারণ, কিছু “লুকোনো” কারণ থাকে যেগুলো সাধারণ স্ক্যানে ধরা পড়ে না। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি এবং অভিজ্ঞ ইন্টারভেনশনাল পেইন ফিজিশিয়ানের সাহায্যে এসব কারণ সনাক্ত করা এবং উপযুক্ত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব।

১. পেশির টান ও স্ট্রেইন (Muscle Strain বা Myofascial Pain Syndrome) - কোমরের পেশিতে টান ধরা বা মাইক্রো-টিয়ার হওয়া খুব সাধারণ একটি কারণ, বিশেষত যারা দীর্ঘক্ষণ একভাবে বসে কাজ করেন বা হঠাৎ ভারী জিনিস তোলেন। এই ব্যথা পেশির গভীরে অনুভূত হয় এবং অনেক সময় একটি নির্দিষ্ট জায়গায় চাপ দিলে ব্যথা বাড়ে। MRI বা X-ray-এ এটি সাধারণত দেখা যায় না। তবে ফিজিকাল এক্সামিনেশন ও ট্রিগার পয়েন্ট চিহ্নিত করে চিকিৎসা দেওয়া যায়। হিট থেরাপি, ফিজিওথেরাপি ও ট্রিগার পয়েন্ট ইনজেকশন এখানে কার্যকর।

২. ডিস্কোজেনিক পেইন (Discogenic Pain) - স্পাইনাল ডিস্কের ভিতরের অংশে ক্ষয় বা অ্যানুলার টিয়ার হলে এই ধরনের ব্যথা হয়। MRI রিপোর্টে কখনো দেখা যায় ডিস্ক হালকা ডিহাইড্রেটেড, কিন্তু ব্যথার মূল উৎস থাকে গভীরে। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে বা সামনের দিকে ঝুঁকলে ব্যথা বাড়ে। ডিসকোগ্রাফি বা অন্যান্য ইন্টারভেনশনাল পরীক্ষায় এটি ধরা পড়তে পারে। চিকিৎসায় কনজারভেটিভ ম্যানেজমেন্ট, ইন্ট্রাডিস্কাল PRP ইনজেকশন, বা রেডিওফ্রিকোয়েন্সি থেরাপি ব্যবহার করা হয়।

৩. সায়াটিকা (Sciatica from Nerve Root Irritation) - যখন কোমরের ডিস্ক সরে গিয়ে স্নায়ুর ওপর চাপ ফেলে, তখন কোমর থেকে পায়ে ব্যথা ছড়ায়। এই ব্যথা অনেক সময় জ্বলুনি বা পিনচিং ধরণের হয়। হাঁটলে বা বসে থাকলে তা বাড়ে। অনেক সময় MRI-তে সামান্য ডিস্ক বাল্জ দেখা যায়, যা একা ব্যথা ব্যাখ্যা করতে পারে না। তবে সমস্যার উৎস নার্ভ ইনফ্ল্যামেশন, যার জন্য ওষুধ, ফিজিওথেরাপি এবং ট্রান্সফোরামিনাল ইপিডুরাল স্টেরয়েড ইনজেকশন কার্যকর হতে পারে।

৪. পিরিফর্মিস সিনড্রোম (Piriformis Syndrome) - এটি একটি কম চিহ্নিত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কারণ। পিরিফর্মিস নামের একটি পেশি, যা হিপ অঞ্চলে থাকে, যদি সায়াটিক নার্ভকে চাপে রাখে, তখন সায়াটিকার মতো উপসর্গ দেখা যায়। বসার সময় ব্যথা বাড়ে, পা চালাতে কষ্ট হয়, তবে MRI তে স্পাইন নরমাল থাকে। ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা ও আল্ট্রাসাউন্ড গাইডেড ইঞ্জেকশন পদ্ধতিতে সহজেই নির্ণয় করা যায় এবং স্ট্রেচিং, ইনজেকশন ও ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

৫. স্যাক্রোইলিয়াক জয়েন্ট ব্যথা (SI Joint Pain) - মেরুদণ্ড ও পেলভিসের সংযোগস্থল, অর্থাৎ SI জয়েন্টে যদি ইনফ্ল্যামেশন বা অস্থিরতা থাকে, তাহলে কোমরের নিচের দিকে একপাশে গভীর ব্যথা অনুভূত হয়। হাঁটাচলা বা বসে উঠার সময় এই ব্যথা বাড়ে। এটি MRI বা X-ray-এ সহজে ধরা পড়ে না, তবে কিছু ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা ও ডায়াগনস্টিক SI জয়েন্ট ইনজেকশনের মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়। চিকিৎসায় জয়েন্ট ইনজেকশন, রেডিওফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন এবং স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিকারী ব্যায়াম প্রয়োগ করা হয়।

৬. ফ্যাসেট জয়েন্ট আর্থ্রোপ্যাথি (Facet Joint Arthropathy) - মেরুদণ্ডের পেছনের ছোট জয়েন্টগুলোতে যদি আর্থ্রাইটিক পরিবর্তন ঘটে, তবে কোমরের দুই পাশে গভীর ও স্থায়ী ব্যথা দেখা যায়। এই ব্যথা সাধারণত পায়ে ছড়ায় না, তবে নড়াচড়া করলে বা পিঠ পেছনে বাঁকালে বাড়ে। MRI তে এটি স্পষ্ট না হলেও, ফ্যাসেট জয়েন্ট ইনজেকশন ও মেডিয়াল ব্রাঞ্চ ব্লকের মাধ্যমে নির্ণয় ও চিকিৎসা সম্ভব। দীর্ঘমেয়াদি ক্ষেত্রে রেডিওফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন অত্যন্ত কার্যকর।
ভুল ভঙ্গিমায় দৈনন্দিন কাজকর্ম (Poor Posture & Ergonomics) - আজকের দিনে মোবাইল, ল্যাপটপ, ডেস্কজব—সবই কোমরের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। অনেকেই খেয়াল করেন না যে দীর্ঘক্ষণ ভুলভাবে বসে থাকার ফলে তাদের কোমরে ব্যথা হয়। উঁচু বালিশে ঘুমানো, নিচু ডেস্কে কাজ করা, বা দীর্ঘক্ষণ একভাবে বসে থাকা—সবই কুমিরের ব্যথার পেছনে কাজ করতে পারে। সঠিক চেয়ার ও ডেস্ক, লাম্বার সাপোর্ট, এবং নিয়মিত বিরতিতে স্ট্রেচিং করলেই এই ধরনের ব্যথা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
উপসংহার - MRI বা X-ray-এ কিছু না দেখালেও, ব্যথা যদি বাস্তবে থেকে যায়, তাহলে তাকে অবহেলা করা উচিত নয়। কারণ ব্যথার উৎস অনেক সময় গভীরে লুকিয়ে থাকে, যা সাধারণ স্ক্যানে ধরা পড়ে না। আধুনিক ইন্টারভেনশনাল পেইন ম্যানেজমেন্ট এবং সঠিক ক্লিনিক্যাল এক্সামিনেশনের মাধ্যমে এই কারণগুলো নির্ণয় ও চিকিৎসা করা সম্ভব। তাই, যদি কোমর ব্যথা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে এবং আপনার দৈনন্দিন জীবনে ব্যাঘাত ঘটায়, তবে একজন প্রশিক্ষিত ইন্টারভেনশনাল পেইন ফিজিশিয়ানের পরামর্শ গ্রহণ করাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।
#কোমরেরব্যথা #DiscogenicPain #FacetJointPain #SIJointPain #PiriformisSyndrome #PainManagement #বাংলায়স্বাস্থ্য #AsianPainAcademy
Commentaires